পড়াশোনা
যেকোনো পরীক্ষায় ভালো করার গোপন ১২টি কৌশল ২০২২
প্রতিটি শিক্ষার্থীর মধ্যে পরীক্ষা নিয়ে উদ্বেগ থাকাটা স্বাভাবিক। কারণ এই উদ্বেগ ভালো ফলাফল করার সহায়ক হতে পারে। পরীক্ষা নিয়ে যাদের চিন্তা-ভাবনা নেই তাদের রেজাল্ট কোনোদিন ভালো হয়না।
যার মধ্যে পরীক্ষা নিয়ে টেনশন রয়েছে সেই একমাত্র ভালো রেজাল্ট করার উপায় খুজবে এবং দিনশেষে তার ফলাফল সবার চেয়ে ভালো হয়। পড়ালেখার সাথে পরীক্ষার সম্পর্ক অন্তরঙ্গ।
যতদিন পড়াশোনা থাকবে ঠিক ততদিন পরীক্ষা থাকবে। তাই পরীক্ষা নিয়ে শুধু টেনশন করলে চলবে না কিভাবে যেকোনো পরীক্ষায় ভালো করা যায় সে সম্পর্কে জানতে হবে।
সারাদিন পড়ার টেবিলে বসে থাকলে ভালো ফলাফল করার সম্ভব নয়। পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করার জন্য পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু স্ট্যাটিজিক কৌশল অনুসরণ করতে হবে।
আমি আজকের এই আর্টিকেলটিতে আলোচনা করতে যাচ্ছি, যে কোনো পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার উপায় সম্পর্কে। এ লেখাটি শেষ পর্যন্ত পড়লে জানতে পারবেন,পরীক্ষায় ভালো করার উপায়, মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করার উপায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো রেজাল্ট করার উপায় প্রভৃতি।
তো চলুন কথা না বাড়িয়ে জেনে নেয়া যাক যেকোনো পরীক্ষায় ভালো করার সেরা কিছু কৌশল সম্পর্কে।
পরীক্ষায় ভালো করার সেরা ১২টি কৌশল
১. সঠিক পরিকল্পনা করা
যেকোনো কাজের ক্ষেত্রে পরিকল্পনা ছাড়া সফলতা অর্জন করা সহজ নয়। পড়াশোনার ক্ষেত্রে ঠিক একই রকম। একটা মানসম্মত সঠিক পরিকল্পনা ব্যতীত পড়াশোনা করে খুব বেশি সফলতা অর্জন করা যায় না। এজন্য প্রতিটি শিক্ষার্থীর পড়াশুনার ক্ষেত্রে একটা সঠিক পরিকল্পনা তৈরি করে নেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।
২. পর্যাপ্ত বিরতি নেওয়া
পড়াশোনা কার্যকরীভাবে করার আরেকটি সেরা উপায় হলো বিরতি নিয়ে পড়াশোনা করা। একটানা দীর্ঘক্ষণ পড়াশোনা করলে পড়াশুনার প্রতি একঘেয়েমি তৈরি হয়। যা একটা সময় মানুষের মনোযোগ নষ্ট করে দেয় পড়াশোনা থেকে।
এজন্য পড়াশোনা করার ক্ষেত্রে বিরতি নিয়ে পুনরায় পড়ালেখা শুরু করা উচিত। কিছুক্ষণ পর পর এভাবে থেমে থেমে বিরতি নিলে আমাদের মস্তিষ্ক পুনরায় সক্রিয় হয়ে যাবে এবং পড়াশোনা আরো বেশি কার্যকর হবে।
৩. নিয়মিত লেখার প্রাকটিস করা
অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা নিয়মিত পড়াশোনা করলেও তারা লেখার চর্চা একেবারেই করে না বলে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করা সম্ভব হয় না। সেজন্য উচিত হবে নিয়মিত পড়ার পাশাপাশি লেখার চর্চা করা। লেখার প্রাকটিস করলে লেখার বানান ভুল হবে না।
পরীক্ষার খাতায় বানান ভুল করা নাম্বার কর্তনের বিশেষ একটা কারণ। তাই পড়ার পাশাপাশি লেখার অনুশীলন করুন এতে করে পরীক্ষার খাতায় বানান ভুল কম হবে এবং লেখার গতি বৃদ্ধি পাবে।
৪. গ্রুপ স্টাডির অভ্যাস করা
গ্রুপ স্টাডি করে পড়াশোনা করলেই সেটা অনেক বেশি কার্যকর হয়ে থাকে। গ্রুপভিত্তিক পড়াশোনা করবে খুব দ্রুত পড়া গুলো মনে রাখা যায় এবং সেগুলো অনেক বেশি দিন মনে থাকে। যে বিষয়গুলো তুলনামূলক মনে রাখা কঠিন সেগুলো গ্রুপ স্টাডির মাধ্যমে পড়াশোনা করা উচিত।
গ্রুপ স্টাডি করার ক্ষেত্রে সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। বন্ধুবান্ধব একত্র হওয়ার ফলে অনেক সময় আড্ডা বেশি দেওয়ার ফলে উপকারের চেয়ে ক্ষতি বেশি হয়। যেকোন পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার সেরা উপায় এটি। সেটা হোক মাধ্যমিক পরীক্ষা কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা।
৫. নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত থাকা
মাধ্যমিক রেজাল্ট বলুন কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজাল্ট বলুন যেকোনো পরীক্ষায় ভালো করতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত থাকা আবশ্যক। আপনি যদি নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত থাকেন তাহলে শিক্ষক কী পড়াচ্ছেন সেটা ভালোভাবে বুঝতে পারবেন।
মাঝে মাঝে শিক্ষকেরা গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন বলে দিয়ে থাকে যেগুলো পরীক্ষায় আসতে পারে। এটা যারা নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত থাকবে তারা জানতে পারবে। তাই নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত থেকে প্রতিটা ক্লাস করবেন।
৬. নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম নিশ্চিত করা
যেকোনো পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে দৈনিক পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। শুনে আশ্চর্য হলেও সত্যি ঘুম আপনার পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার সহায়ক হবে।
একজন শিক্ষার্থী হিসেবে দৈনিক আপনার পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। নতুবা আপনি পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারবেন না এবং যে বিষয়গুলো পড়েছেন সেগুলো মনে রাখতে পারবেন না দীর্ঘদিন। এছাড়া আপনার স্বাস্থ্যজনিত কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মুখমন্ডলের ব্রণ ওঠা ইত্যাদি। একজন শিক্ষার্থী দৈনিক আট ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করলে সেটা পর্যাপ্ত ঘুমের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে। এর বেশি ঘুমানোর কোনো প্রয়োজন নেই। তবে কমপক্ষে 7 ঘণ্টা অবশ্যই ঘুমানো উচিত।
৭. নিয়মিত নোট তৈরি করা
অল্প পড়াশোনা করে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার আরেকটি সেরা উপায় হলো এটি। অল্প পড়ে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার জাদুকরি উপায় এটি। আপনি যখন ক্লাস করবেন তখন শিক্ষক যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বলবে সেগুলো দ্রুত নোট করে নিবেন।
নিয়মিত নোট করলে পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধি পায়। যেকোনো পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া অনেকাংশে সহজ হয়ে যায়। ভুলেও কখনো ক্লাসের পড়া বোঝা বাদ দিয়ে শুধু নোট করবেন না। এতে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অনার্সে ভালো রেজাল্ট করার সেরা উপায় এটি।
৮. উপযুক্ত পরিবেশে পড়াশোনা
কার্যকরীভাবে পড়াশোনা করার জন্য ভালো পরিবেশে থাকা আবশ্যক। পড়াশোনার ক্ষেত্রে ভালো পরিবেশ তৈরি করা বাধ্যতামূলক। নতুবা এই পড়াশুনা তেমন কোনো কাজে আসবে না।
পড়াশোনার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করার ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখা উচিত। প্রথমত, মোবাইল ফোন নিজের কাছ থেকে দূরে রাখা। দ্বিতীয়ত, শান্ত পরিবেশ রয়েছে এমন জায়গা নির্বাচন করা। তৃতীয়ত, পর্যাপ্ত পরিমাণ আলো-বাতাস রয়েছে এমন স্থান নির্বাচন করা।
চতুর্থত, বিছানা পরিহার করে টেবিলে পড়ার অভ্যাস করা। বিছানায় পড়াশোনা করলে অলসতা ভর করতে পারে। তাই পড়াশোনার ক্ষেত্রে উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা উচিত।
৯. বিগত বছরের প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণ করা
যেকোনো পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার মূল মন্ত্র হলো এটি। আপনি যে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন সেই পরীক্ষার বিগত বছরের প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণ করা আপনার জন্য বাধ্যতামূলক।
বিগত বছরের প্রশ্নগুলো বিশ্লেষণ করলে আপনি বুঝতে পারবেন পরীক্ষার প্রশ্নের ধরন। এছাড়া কোন টপিকগুলো আপনার জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেগুলো বুঝতে পারবেন। এভাবে কম গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো বুঝতে পারবেন। বিগত বছরের প্রশ্নপত্রগুলো বিশ্লেষণ করলে প্রস্তুতি নেয়া আপনার জন্য সহজ হবে।
এছাড়া অনেক সময় বিগত বছরের প্রশ্ন থেকে হুবহু কমন পড়ে। বিগত বছরের প্রশ্নগুলো বিশ্লেষণ করে আপনি চাইলে সাজেশন তৈরি করে পড়তে পারবেন।
১০. নিয়মিত রিভিশন দেওয়া
নিয়মিত নতুন পড়া পড়লে হবে না। পাশাপাশি যে পড়াগুলো বিগত দিনে সম্পন্ন করা হয়েছে সেগুলো নিয়মিত রিভাইজ দেওয়া উচিত। নিয়মিত পড়া রিভিশন দিলে সেই পড়ার দীর্ঘদিন মনে থাকবে।
পরীক্ষার আগে মাথায় চাপ সৃষ্টি হবে না। পরীক্ষায় ভালো করা সহজ হবে। তবে আপনাকে অবশ্যই করা রিভিশন দেওয়ার নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। নতুবা রিভিশন খুব বেশি কাজে দিবে না।
১১. নিয়মিত পরীক্ষা দেওয়া
আপনাকে অবশ্যই নিয়মিত পরীক্ষা দেয়ার মাধ্যমে নিজেকে যাচাই করতে হবে। নিয়মিত পরীক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে নিজের দুর্বলতা সম্পর্কে ধারনা পাবেন। পরবর্তীতে দুর্বলতাগুলো দূর করার চেষ্টা করবেন।
এছাড়া নিয়মিত পরীক্ষা দেওয়া মানে মডেল টেস্ট পরীক্ষায় করা ভুলগুলো দ্বিতীয়বার হবে না। নিয়মিত পরীক্ষা দিলে আপনার জন্য টাইম ম্যানেজমেন্ট করা সহজ হবে।
১২. নিয়মিত রুটিনমাফিক পড়াশোনা করা
নিয়মিত রুটিনমাফিক পড়াশোনা করলে নিজের আত্মবিশ্বাস অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়। আত্মবিশ্বাস যেকোনো পরীক্ষায় ভালো করার মূলমন্ত্র হিসাবে কাজ করে।
নিয়মিত রুটিনমাফিক পড়াশোনা করলে পড়া জমে থাকে না। খুব সহজে যেকোনো পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করা যায়। এজন্য সুন্দর করে একটা আদর্শ পড়ার রুটিন তৈরি করে নিতে হয়।
পরিশেষে বলতে চাই, উপরের কৌশলগুলো অবলম্বন করলে আশা করি যেকোনো পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার সম্ভব। আমি যদি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে চান তবে উপরের টিপসগুলো অনুসরণ করতে পারেন। অনুসরণ করলে অবশ্যই যেকোনো পরীক্ষায় ভালো করতে পারবেন এটা আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি।